হাওর বিলাসের জলযাত্রা
স্মৃতি হিসাবে ছবিগুলো রাখলাম |
হাওরের বুকে গাছগাছালি অসাধারণ লাগে |
নৌকার মধ্যে একটি স্মৃতি |
টাঙ্গুয়ার হাওরের সাঁতার কাটা |
হাওরের বুকে গাছগাছালি |
নৌকার আগায় (গলই-এ) বসে একটি পোজ |
লাকমাছড়ার পাহাড়ের পাদদেশে |
![]() |
ঝিঝি বৃষ্টির মধ্যে একটি ক্লিক |
লামকাছড়ার পাথরে বসে পিছনে ঝুলন্ত ব্রিজ |
বাংলার প্রকৃতি যেন এক অনন্য শিল্পী। নদী, হাওর, পাহাড়, গাছগাছালি, রোদ্দুর আর বৃষ্টির ঝরনা—সব মিলিয়ে আঁকেন অসাধারণ ক্যানভাস। সেই ক্যানভাসে পা রেখেছিলাম আমরা, হাওর বিলাসের জলযাত্রায়।
মেঘবৃষ্টি উপেক্ষা করে পথচলা
বাদ ফজর। চারপাশে মেঘ আর টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ। অথচ আবহাওয়া উপেক্ষা করে আমরা নৌকা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাণীপুর জয়নগর (সুনামগঞ্জ সদর থানা) রওনা হলাম। সাথে দূরের কাছের প্রিয়ভাইরা, যাদের সান্নিধ্যে ভ্রমণ আরও আনন্দময় হয়ে উঠেছিল।
সকালের নাশতায় ছিল গরম গরম খিচুড়ি ভুনা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে বসে সেই খাবার যেন আলাদা স্বাদ এনে দিলো—যা কেবল ভ্রমণপিপাসুরাই বুঝতে পারে।
বৃষ্টিবিলাসের আনন্দ
বাদ জুমা। আকাশের কালো মেঘ সরে গিয়ে উঁকি দিলো সোনালি রোদ। সেদিন ভ্রমণ শুধু ভ্রমণ ছিল না, হয়ে উঠেছিল বৃষ্টিবিলাস। দীর্ঘদিন পর প্রকৃতির বুকে ভিজে ভিজে যে আনন্দ পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। মনে হলো, শৈশব যেন আবার ফিরে এসেছে।
টাঙুয়ার হাওর ও নিলাদ্রীর মোহ
টাঙুয়ার হাওরের বিস্তৃত জলরাশি, গাছগাছালির সবুজ ছায়া আর ওয়াচ-টাওয়ার থেকে দেখা সীমাহীন দৃশ্য মনকে মুগ্ধ করলো। কালো, স্বচ্ছ ও শীতল পানিতে সাঁতার কেটে প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। দুপুরে পোলাও আর মজার তরকারি খেয়ে ভ্রমণের স্বাদ আরও বেড়ে গেলো।
এরপর গিয়েছিলাম নিলাদ্রী লেকে। সবুজ পানির গভীর শান্তি, চারপাশের উঁচুনিচু টিলা আর ঘন সবুজে ঢাকা প্রকৃতি—সব মিলে এক পরিপূর্ণ সৌন্দর্য। মনে হলো, প্রকৃতি যেন আপন হাতে সাজিয়ে রেখেছে এই লেককে।
সীমান্তের টানে লাকমাছড়া
লাকমাছড়ার ঝুলন্ত ব্রিজে দাঁড়িয়ে চারপাশের দৃশ্য চোখে ধরে রাখার মতো। ভারত-বাংলাদেশের শেষ সীমান্তে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছ পানির ধারা, পাথরের মেলা আর চারপাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমাদের মনে অমলিন স্মৃতি গড়ে দিলো।
সন্ধ্যার ঝালমুড়ি পার্টি
দিন শেষে সন্ধ্যা নামতেই জমলো ঝালমুড়ি পার্টি। হাতে ঝালমুড়ির ঠোঙা, চারপাশে গল্প-আড্ডা আর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি—সেই সময়টুকুও হয়ে উঠলো ভ্রমণের অংশ।
চাঁদের আলোয় ফেরা
সবশেষে ফেরার আনন্দ ছিল একেবারেই ভিন্ন। রাতের হাওরে নৌকা ছুটে চলল হাওর পেরিয়ে গাঙ দিয়ে। দুপাশে গ্রামের নিস্তব্ধতা, চাঁদের আলোয় ঝলমলে পানি আর হিমেল হাওয়া—সব মিলিয়ে ছিল অপূর্ব এক দৃশ্য। সেই মুহূর্তে ভ্রমণের সমস্ত ক্লান্তি মিলিয়ে গিয়ে হৃদয়ে জমে রইলো কেবল শান্তির আবেশ।
শেষকথা
এই হাওর বিলাসের জলযাত্রা আমাদের জন্য কেবল ভ্রমণ নয়, ছিল আত্মাকে নাড়া দেওয়ার মতো এক অভিজ্ঞতা। বাংলার প্রকৃতি সত্যিই অফুরন্ত সৌন্দর্যে ভরপুর। যে কেউ একবার এ হাওরে ঘুরতে এলে তার মনে প্রকৃতিকে আরও ভালোবাসার অনুপ্রেরণা জাগবে।
পাঁচ সেপ্টেম্বর দুই'হাজার পঁচিশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন