সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

রমাদান নাম করণের কারণ

রমাদান (رمضان) শব্দটা ‘রমাদ’ (رمض) থেকে এসেছে যার অর্থ প্রচন্ড খরতাপে উত্তপ্ত হওয়া, দগ্ধ হওয়া বা পুড়ে যাওয়া। আরব’দের ভাষায় রমাদানে তাদের বকরীগুলো উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ঘাস খেয়ে চড়িয়ে বেড়ানোর সময় প্রায়শই তাদের শরীর পুড়ে যেতো।
.
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, “এই মাসের নাম করণ করা হয়েছে রমাদান কারণ এটি বান্দার গুনাহ সমূহকে নেক আমল দ্বারা পুড়িয়ে ফেলে।” [তফসীরে আল কুরতুবী, ২/২৭১]
.
‘রমাদান’ — মুমিনদের জন্য রহমত, একটি সুবর্ণ সুযোগ অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার। পুরো রমাদানে বান্দার সবচেয়ে বড় সফলতা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার পক্ষ থেকে তাঁর ক্ষমা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বান্দার এই প্রাপ্তিকে দাস মুক্তি পাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। দাস একবার মুক্ত করে দিলে তা আর ফিরিয়ে নেয়া যায়না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা একবার যদি তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করে দেন তবে তিনি কি করে বান্দাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন? আল্লাহু আকবার!
.
আগামী রমাদান পর্যন্ত আমাদের অনেকেই হয়তোবা বেঁচে থাকবেনা। এই রমাদানে অনেকেই আর বেঁচে নেই যেমনটা ছিলেন গত রমাদানে। আমরা প্রত্যেক মুমিন বান্দারা এই রমাদানকে-ই আমাদের জীবনের শেষ রামাদান এবং গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ মনে করে ইবাদাতে মনযোগী হই বিইযনিল্লাহ।
.
বরকতময় এই মাসের শেষ রাতগুলো তে যখন আপনি শুধুই রাব্বে কারীমের সন্তুষ্টির জন্য সালাতে দাঁড়াবেন, যখন আপনার আর তাঁর সাক্ষাতের মাঝে আর কেউ থাকবেনা তখন দুআ’তে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তাঁর কাছে চাইবেন । মনের সমস্ত আবেগ ঢেলে দিয়ে বলবেন — হে আল্লাহ! আমার মা আমার প্রতি সবচেয়ে দয়াশীল। তিনি কখনো আমাকে কষ্ট দিবেন না, আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবেন না। হে আল্লাহ! আপনি তো আমার মায়ের চাইতেও বেশি দয়াশীল। সুতরাং আমাকে কষ্ট থেকে রক্ষা করুন, আমার সমস্ত গুনাহ আপনি ক্ষমা করে দিন।
.
হে আল্লাহ! আমি ছাড়া তো আপনার অনেক... অনেক... বান্দা আছে কিন্তু আমার তো আপনি ছাড়া আর কেউ নাই... কেউ নাই। অতএব আপনি,
.
আমাকে ক্ষমা করুন..
আমাকে ক্ষমা করুন..

আমাকে ক্ষমা করুন..

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০

ঈমান ভ্রাতৃত্বের দাবি

ঈমানী ভ্রাতৃত্বের রয়েছে অনেক দাবি।...

অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, দীনি-দুনিয়াবি মতভেদের ক্ষেত্রে একে অপরকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করা, গীবত করা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, কুধারণা পোষণ করা, কটূক্তি করা  খারাপ নামে বা মন্দ উপাধিতে ডাকা─ এসব বিষয়ের চর্চা হতে থাকে। লোকেরা যেন ভুলেই যায় (আমি বলি আলেমরাও তো বেমালুম ভুলে যায়) যে, কুরআন মজীদে এ বিষয়গুলোকে হারাম করা হয়েছে। প্রত্যেকের আচরণ থেকে মনে হয়, প্রতিপক্ষের ইজ্জত-আব্রু নষ্ট করা হালাল! মতভেদের কারণে তার কোনো ঈমানি অধিকার অবশিষ্ট নেই।

অথচ এ তো শুধু মুমিনের হক নয়, সাধারণ অবস্থায় মানুষমাত্রেরই হক। একজন মানুষ অপর একজন মানুষের কাছে এই নিরাপত্তাটুকু পাওয়ার অধিকার রাখে। এমনকি যদি সে মুসলিমও না হয়।

হায়! বিরোধ ও মতভেদের ক্ষেত্রে যদি আমরা প্রতিপক্ষকে অন্তত একজন মানুষ মনে করে তার গীবত শেকায়েত থেকে, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া থেকে, উপহাস বিদ্রূপ করা থেকে এবং মন্দ নামে ডাকা থেকে বিরত থাকতাম! আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহয় তো জীবজন্তু, এমনকি জড় বস্তুরও হক বর্ণিত হয়েছে। তো মতভেদকারী আর কিছু না হোক একজন প্রাণি তো বটে!!...

হাদীসে যে হকগুলো বলা হয়েছে তা মুসলমানদের সাধারণ হক। তা পাওয়ার জন্য মুমিন ও মুসলিম হওয়া ছাড়া আর কোনো শর্ত নেই। সুতরাং দুজন মুসলিমের মাঝে বা দুইদল মুসলমানের মাঝে কোনো দীনি বা দুনিয়াবি বিষয়ে মতভেদ হলে সেখানেও এসব হক রক্ষা করতে হবে এবং শরীআতের এসব বিধান মেনে চলতে হবে।

কোনো হাদীসে বলা হয় নি যে, দুই মুসলিমের মাঝে মতভেদ হলে তখন আর এসব হক রক্ষা করতে হবে না। বরং সেটিই তো আসল ক্ষেত্র হকগুলো রক্ষা করার। সাধারণত মতপার্থক্য দেখা দিলেই এ হকগুলো বিনষ্ট করা হয়। সুতরাং ওই ক্ষেত্রেই যদি সকলে তা রক্ষায় সতর্ক না হয় তাহলে আর সুন্নাহর অনুসরণ ও হাদীস মোতাবেক আমলের কী অর্থ থাকে?

───────────────
মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক, উম্মাহর ঐক্য পথ ও পন্থা, পৃ. ২৩ ও ৩০।

বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০

শবে বরাতের রোজা

ক্যাপশন যোগ করুন

 শবে বরাত উপলক্ষে পরের দিন ১৫ তারিখ অনেকেই রোজা রাখেন। এমনিতে কেউ চাইলে মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখতে পারে। কেননা পনেরো তারিখ হলো ‘আইয়্যামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। সে হিসেবে যদি কেউ ১৫ তারিখ রোজা রাখে, তাহলে সমস্যা নেই। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি রাহি. বলেন-
وأما صيام يوم النصف منه فغير منهي عنه، فإنه من جملة أيام البيض الغر المندوب إلى صيامها من كل شهر. وقد ورد الأمر بصيامه من شعبان بخصوصه،
অর্থাৎ, শাবান মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখতে নিষেধ নেই। কারণ, ১৫ তারিখ হলো ‘আইয়্যামে বীজ’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর প্রত্যেক মাসের এ তারিখে রোজা রাখা মুস্তাহাব। এছাড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ করে শাবান মাসে রোজা রাখতে বলেছেন। (লাতায়িফুল মাআরিফ পৃষ্ঠা নং, ১৮৯ দারুল হাদিস , কাহেরা।)

কিন্তু  আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ ১৫ তারিখ রোজা রাখেন শবে বরাতের রোজা মনে করে। এ সংক্রান্ত  ‘ইবনে মাজাহ’ এর একটি রেওয়ায়াত দলিলস্বরূপ পেশ করা হয়। আলি রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر
অর্থাৎ, শাবান ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তোমরা নামাজ পড়ো এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা আল্লাহ তাআলা সে রাতের সূর্যাস্তের সময় দুনিয়ার আসমনে অবতরণ করেন এবং বলেন, আছো কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করবো। আছো কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তোমাকে রিজিক প্রদান করবো। আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তোমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে সুবহে সাদিক উঁদিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ডাকতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮৮, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকিককৃত।)

শবে বরাতের সময় বেশিরভাগ মসজিদের মিম্বরে হাদিসটি উচ্চারিত হয়।   আলি রা. এর সূত্রে বর্ণিত এ হাদিসের উপর ভিত্তি করে অনেকেই শবে বরাত উপলক্ষে রোজা রাখেন। এজন্য হাদিসটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরছি।

প্রথম কথা হলো, হাদিসটি সহিহ নয়। জয়িফ তথা দুর্বল। হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হলো ইবনে আবি সাবরা। তার নাম হলো, আবু বকর ইবনে আবদুল্লাহ বিন আবু সাবরা আল মাদানি। ইমাম জাহাবি রহ. তার ব্যাপারে বলেনÑ
أبو بكر بن عبد الله بن أبي سبرة ضعفه البخاري وغيره وروى عبد الله وصالح ابنا أحمد عن أبيهما قال: كان يضع الحديث، وقال النسائي: متروك وقال ابن معين ليس حديثه بشيء" اه.
অর্থাৎ, ইমাম বুখারি রহ. এবং অন্যান্যরা তাকে যয়িফ তথা দুর্বল বলেছেন।
আবদুল্লাহ বিন আহমদ এবং সালেহ বিন আহমদ তাদের পিতা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সে হাদিস জাল করতো।
ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহ. বলেন, তার বর্ণিত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। ( মিযানুল এতেদাল : ৪/৪১৪)
এরপর ইমাম জাহাবি রহ. তার থেকে বর্ণিত মুনকার বর্ণনা সমূহের মাঝে এ হাদিস  উল্লেখ করেছেন।

 ইমাম ইবনে হিব্বান তার ব্যাপারে বলেন,
"كان ممن يروي الموضوعات عن الأثبات لا يحل كتابة حديثه ولا الاحتجاج به بحال، كان أحمد بن حنبل يكذبه" اه.
অর্থাৎ, সে গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী থেকে জাল হাদিস  বর্ণনা করতো। তার সূত্রে বর্ণিত হাদিস  লেখা জায়েজ নেই। কোনো অবস্থাতেই তার বর্ণিত হাদিস দ্বারা দলীল দেওয়া যাবে না। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল তাকে মিথ্যুক বলেছেন।

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি রহ. তার সম্পর্কে বলেন,
أبو بكر بن عبد الله بن محمد بن أبي سبرة بفتح المهملة وسكون الموحدة بن أبي رهم بن عبد العزى القرشي العامري المدني قيل اسمه عبد الله وقيل محمد وقد ينسب إلى جده رموه بالوضع وقال مصعب الزبيري: كان عالما من السابعة مات سنة اثنتين وستين ق.
অর্থাৎ তাকে হাদিস  জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মুসআব বলেছেন, তিনি আলেম ছিলেন। (তাকরিবুত তাহজিব, তরজমা নং  ৭৩১২)

আলী ইবনুল মাদিনি রহ. বলেন-
كان ضعيفا في الحديث
অর্থাৎ হাদিস  বর্ণনার ক্ষেত্রে সে যয়ীফ তথা দুর্বল।
তিনি অন্যত্র বলেন-
كان منكر الحديث هو عندي مثل بن أبي يحيى
অর্থাৎ সে আপত্তিকর বর্ণনাকারী। আমার নিকট সে ইবনে আবি ইয়াহইয়া এর মতো।
ইমাম নাসাঈ বলেন-
متروك الحديث
অর্থাৎ সে হাদিস  বর্ণনার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।
ইমাম ইবনে আদি রহ. বলেন-
عامة ما يرويه غير محفوظ وهو في جملة من يضع الحديث
অর্থাৎ তার অধিকাংশ বর্ণনা মাহফুয নয়। সে হাদিস  জালকারীদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
ইমাম সাজী বলেন-
عنده منا كير
সে আপত্তিকর বর্ণনাকারী।
হাকেম আবু আবদুল্লাহ বলেন-
يروي الموضوعات عن الاثبات مثل هشام بن عروة وغيره
সে গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী থেকে জাল হাদিস  বর্ণনা করে। হিশাম ইবনে উরওয়া এবং অন্যদের মতো। (তাহজিবুত তাহজিব, ১২/৩২ দারুল ফিকর, বায়রুত, প্রথম সংস্করণ।) 

ইমাম ইবনে সাদ রহ. বলেন-
كان كثير الرحلة والسماع والرواية ولي قضاء مكة لزياد الحارثي وكان يفتي بالمدينة
হাদিস  শুনা এবং বর্ণনা করার জন্য তিনি অনেক সফর করেছেন। তিনি মদীনায় ফতোয়া দিতেন।

 ইমাম যাহাবি রহ. বলেন-
الفَقِيْهُ الكَبِيْرُ، قَاضِي العِرَاقِ، أَبُو بَكْرٍ بنُ عَبْدِ اللهِ بنِ مُحَمَّدِ بنِ أَبِي سَبْرَةَ بنِ أَبِي رُهْمٍ –   وَهُوَ ضَعِيْفُ الحَدِيْثِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِه.
অর্থাৎ তিনি উঁচু মাপের ফকীহ ছিলেন। ইরাকের বিচারক ছিলেন। স্মৃতি শক্তির কারণে তিনি হাদিস  বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১৩/৩৭৪, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকিককৃত)

মোটকথা হলো- অধিকাংশ ইমামের মতে ইবনে আবি সাবরা হলেন মারাত্মক দুর্বল বর্ণনাকারী। কেউ কেউ থাকে হাদিস  জালকারীও বলেছেন। এজন্য তার বর্ণিত এ হাদিস  হলো চূড়ান্ত পর্যায়ের দুর্বল।  আল্লামা ইবনুল জাওযী রহ. ‘আল ইলালুল মুতানাহিয়াহ’ এর মধ্যে বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন-
هذا حديث لا يصح
অর্থাৎ বর্ণনাটি সহিহ নয়। (আল ইলালুল মুতানাহিয়াহ : ৩/৫৬১)

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে,  আলী রা. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসের প্রথম অংশের ভাবার্থ আরও অনেক সহিহ হাদিস  দ্বারা প্রমাণিত। অর্থাৎ, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের ফজিলত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একাধিক সহিহ হাদিস  দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু রোজার বিষয়টি শুধুমাত্র আলি রা. এর বর্ণনায় রয়েছে। আর এ হাদিসটি মুনকার।

১৫ তারিখ যেহেতু ‘আইয়্যামে বীজ’ এর অন্তর্ভূক্ত, এজন্য কেউ চাইলে সে হিসেবে  সেদিন রোজা রাখতে পারে। যেমনটা বলেছেন আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহ.। কিন্তু শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ রোজা প্রমাণিত নয়৷

শবে বরাত সম্পর্কে ইমামগণ কী বলেন?


শবে বরাতের ফযীলত যেমনভাবে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, এমনভাবে উম্মতের বরেণ্য ইমামগণ এ রাতের মর্যাদাকে স্বীকার করেছেন। এখন কয়েকজন ইমামের বক্তব্য উল্লেখ করছি।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
وأما ليلة النصف من شعبان ففيها فضل وكان في السلف من يصلي فيها لكن الاجتماع فيها لإحيائها في المساجد بدعة وكذلك الصلاة الألفية
অর্থাৎ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত রয়েছে। সালাফের অনেকেই এ রাতে নামায পড়েছেন। কিন্তু সম্মিলিতভাবে  মসজিদে সে রাত জাগা বেদয়াত।  এমনভাবে জামাতে নামায পড়াও বেদয়াত।( আল ফাতাওয়াল কুবরা, ইবনে তাইমিয়া ১/৩০১)

১.ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃত্যু ৭২৭হি.) আরো বলেন,
ومن هذا الباب ليلة النصف من شعبان فقد روى في فضلها من الأحاديث المرفوعة والآثار ما يقتضي أنها ليلة مفضلة وأن من السلف من كان يخصها بالصلاة فيها وصوم شهر شعبان قد جاءت فيه أحاديث صحيحة ومن العلماء من السلف من أهل المدينة وغيرهم من الخلف من أنكر فضلها وطعن في الأحاديث الواردة فيها كحديث إن الله يغفر فيها لأكثر من عدد شعر غنم بني كلب وقال لا فرق بينها وبين غيرها
 لكن الذي عليه كثير من أهل العلم أو أكثرهم من أصحابنا وغيرهم على تفضيلها وعليه يدل نص أحمد لتعدد الأحاديث الواردة فيها وما يصدق ذلك من الآثار السلفية وقد روى بعض فضائلها في المسانيد والسنن وإن كان قد وضع فيها أشياء أخر
অর্থাৎ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস এবং আরো অনেক আছার বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো দ্বারা এ রাতের ফযীলত প্রমাণিত হয়। সালাফের অেেনকেই এ রাতে বিশেষ করে নামায পড়তেন। শাবান মাসের রোযা সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস এসেছে। সালাফদের থেকে মদীনার অনেক উলামায়ে কেরাম এবং পরবর্তী কেউ কেউ শবে বরাতের ফযীলতকে অস্বীকার করেছেন এবং এ সংক্রান্ত হাদীসগুলোর ব্যাপারে আপত্তি করেছেন। বিশেষত বনু কালব গোত্রের বকরীর পশম পরিমাণ লোক ক্ষমা করে দেয়ার হাদীস।
কিন্তু অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এবং আমাদের অনুসৃতদের মত হলো: এ রাতের ফযীলত রয়েছে। ইমাম আহমদ রহ. এর নস এ কথার দালালাত করে। কেননা এ রাতের ফযীলত বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্নভাবে এসেছে। সালাফ থেকে বর্ণিত আছার সেগুলোর সত্যায়ন করে। ‘মুসনাদ’ এবং ‘সুনান’ এর কিতাবাদিতে এ রাতের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যদিও এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে কিছু বর্ণনা জাল করা হয়েছে।( ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, ১/৩০২)

ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য থেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট হলো। প্রথমত শবে বরাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং আমাদের যে সমস্ত ভায়েরা বলে থাকেন যে, সহীহ হাদীস দ্বারা শবে বরাতের ফযীলত প্রমাণিত নয়, ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য অনুসারে তাদের কথা সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত: সালাফের অনেকেই সে মর্যাদাপূর্ণ রাতে একাকী নামায পড়েছেন। তবে সম্মিলিতভাবে মসজিদে এক সাথে নামায আদায় করা বেদয়াত। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাদের থেকে সম্মিলিতভাবে এমন আমল প্রমাণিত নয়। এজন্য আমাদের দেশে যারা মুতলাকভাবে বলে দেন যে, এ রাতে বিশেষ কোনো আমল নেই, ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য অনুসারে তাদের কথাও সঠিক নয়। কেননা সালাফরা এ রাতে একাকী নামায পড়েছেন।

২..  ইমাম ইবনে আমীর আল হাজ আসসানআনী মালেকী রহ. (মৃত্যু ৭৩৭ হি.) বলেন,
وَبِالْجُمْلَةِ فَهَذِهِ اللَّيْلَةُ ، وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ فَلَهَا فَضْلٌ عَظِيمٌ وَخَيْرٌ جَسِيمٌ وَكَانَ السَّلَفُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ يُعَظِّمُونَهَا وَيُشَمِّرُونَ لَهَا قَبْلَ إتْيَانِهَا فَمَا تَأْتِيهِمْ إلَّا وَهُمْ مُتَأَهِّبُونَ لِلِقَائِهَا ، وَالْقِيَامُ بِحُرْمَتِهَا عَلَى مَا قَدْ عُلِمَ مِنْ احْتِرَامِهِمْ لِلشَّعَائِرِ عَلَى مَا تَقَدَّمَ ذِكْرُهُ هَذَا هُوَ التَّعْظِيمُ الشَّرْعِيُّ لِهَذِهِ اللَّيْلَةِ ، ثُمَّ جَاءَ بَعْضُ هَؤُلَاءِ فَعَكَسُوا الْحَالَ كَمَا جَرَى مِنْهُمْ فِي غَيْرِهَا
অর্থাৎ শবে-বরাতের মর্যাদা যদিও শবে কদরের  মত নয়, কিন্তু তারপরও সে রাতের অনেক মর্যাদা এবং কল্যাণ রয়েছে। সালাফরা এ রাতকে গুরুত্ব দিতেন এবং  এ রাত আসার আগে অপেক্ষা করতেন। এ রাত আসলে তারা পুরো রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করতেন। এ রাতের বিশেষ ফযীলতের কারণে।  এর পর কিছু লোক আসলো এর বিপরীত।  তারা পূর্বের অবস্থাকে পাল্টিয়ে দিলো।(.  আল মাদখাল, ১/২৯৯)

৩. হাফেয ইবনুল কায়্যিম রহ. (মৃত্যু ৭৫১হি.) বলেন,
وقد صح وتقرر واتضح عند جميع أهل الديانة والسنة والجماعة من السلف الماضين. والصحابة والتابعين من الأئمة المهتدين الراشدين المشهورين إلى زماننا هذا أن جميع الآي الواردة عن الله تعالى في ذاته وصفاته والأخبار الصادقة الصادرة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم في الله وفي صفاته التي صححها أهل النقل. وقبلها النقاد الأثبات، يجب على المرء المسلم المؤمن الموفق الإيمان بكلاحد منه كما ورد
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, অনুসৃত ইমামগণ সহ সালাফের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সকল ইমামগণের কাল বেয়ে আমাদের জামানা পর্যন্ত সকলের সহীহ এবং স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহর যাত এবং সিফাত সম্পর্কিত সকল আয়াত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল সত্য সংবাদ, তার সিফাত সংক্রান্ত সে সব বর্ণনা যেগুলোকে শাস্ত্রবিদগণ সহীহ বলেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। প্রত্যেক মুসলমানের উপর সেগুলোর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব।
এরপর আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
وجميع ما لفظ به المصطفى صلى الله عليه وسلم، من صفاته كغرسه جنته الفردوس بيده وشجرة طوبى بيده، وخط التوراة بيده والضحك والتعجب ووضعه القدم على النار فتقول قط قط. وذكر الأصابع والنزول كل ليلة إلى سماء الدنيا، وليلة الجمعة وليلة النصف من شعبان وليلة القدر.
এরপর তিনি কোনো কোন বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে, এ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, সবগুলোর উপর ঈমান আনতে হবে।
এরপর তালিকায় বলেন, প্রত্যেক রাতে আল্লাহ তায়ালা আসমানে অবতরণ। জুমার রাতের ফযীলত। দুই ঈদের রাতের ফযীলত। শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত এবং শবে কদরের ফযীলতের উপর ঈমান আনতে হবে। .( ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়া, পৃষ্ঠা নং, ৭৫-৭৬)

ইবনুল কায়্যিম রহ. হলেন ইবনে তাইমিয়া রহ. এর হাতেগড়া শিষ্য। আমাদের যে সমস্ত ভায়েরা বলে থাকেন যে, শবে বরাতের ফযীলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহভাবে প্রমাণিত নয়, তারা ইবনে তাইমিয়া এর মত ইবনুল কায়্যিম রহ. দ্বারাও বেশ কিছু মাসআলায় দলীল পেশ করেন।  কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম যে, ইবনুল কায়্যিম রহ. শবে বরাতের ফযীলতের উপর প্রত্যেক মুসলামানের ঈমান আনার কথা বলেছেন।

৪. আল্লামা ইবনে রজব  হাম্বলি রহ. (মৃত্যু:৭৯৫) বলেন,
وأما صيام يوم النصف منه فغير منهي عنه، فإنه من جملة أيام البيض الغر المندوب إلى صيامها من كل شهر. وقد ورد الأمر بصيامه من شعبان بخصوصه، ففي سنن ابن ماجه بإسناد ضعيف عن علي عن النبي - صلى الله عليه وسلم ......
أنه يكره الاجتماع فيها في المساجد للصلاة والقصص والدعاء. ولا يكره أن يصلي الرجل فيها لخاصة نفسه. وهذا قول الأوزاعي إمام أهل الشام وفقيههم وعالمهم، وهذا هو الأقرب إن شاء الله تعالى...........
فينبغي للمؤمن أن يتفرغ في تلك الليلة لذكر الله تعالى، ودعائه بغفران الذنوب، وستر العيوب، وتفريج الكروب، وأن يقدم على ذلك التوبة، فإن الله تعالى يتوب فيها على من يتوب.
অর্থাৎ শাবান মাসের পনের তারিখ রোযা রাখতে সমস্যা নেই। কেননা পনের তারিখ হলো ‘আইয়্যামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। প্রত্যেক মাসের সে তারিখে রোযা রাখা সুন্নাত। এছাড়া বিশেষ করে শাবান মাসে রোযা রাখার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুর্বল সনদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
এরপর তিনি শবে বরাতে রাত্রি জাগা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, কেউ কেউ নামাজ, কিসসা, কাহিনী বর্ণনা এবং দোয়ার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়াকে মাকরুহ বলেছেন। তবে সে রাতে একাকী নামায পড়া মাকরুহ নয়। এমনটা হলো শামের ইমাম আওযায়ী এবং শামের অন্যান্য ফকীহ এবং আলেমদের মত। আমার মতে এ মত হলো বিশুদ্ধতার অধিক নিকটবর্তী।
এরপর এ রাতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করার পর লিখেন: মুমিনদের জন্য উচিৎ হলো, সে রাতে বেশি করে আল্লাহর জিকির করা। নিজের গোনাহের জন্য ক্ষমা চেয়ে , নিজের দোষ-ত্রæটি গোপন রাখার জন্য, বিপদে রাস্তা দেখানোর জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা। তবে এগুলোর আগে তাওবা করা। কেননা এ রাতে তওবাকারীর তওবাকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন।( লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা নং, ১৮৮-১৯০, দারুল হাদীস কাহেরা)

৫. আল্লামা আবদুল হাই লাখনোভী রহ. ( মৃত্যু:১৩০৪ হি.) বলেন,
وفي الباب أحاديث أخر أخرجها البيهقي وغيره على ما بسطها ابن حجر المكي في الإيضاح والبيان دالة على أن النبي أكثر في تلك الليلة من العبادة والدعاء وزار القبور ودعا للأموات فيعلم بمجموع الأحاديث القولية والفعلية استحباب إكثار العبادة فيها فالرجل مخيربين الصلاة وبين غيرها من العبادات فإن اختار الصلاة فكمية أعداد الركعات وكيفيتها مفوضة إليه ما لم يأت بما منعه الشارع صراحة أو إشارة
অর্থাৎ শবে বরাতের ফযীলত সংক্রান্ত আরো হাদীস রয়েছে। যেগুলো ইমাম বায়হাকী সহ আরো অনেকে তাখরীজ করেছেন। ইবনে হাজার মাক্কী ‘আল ঈজাহ ওয়াল বায়ান’ নামক কিতাবে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতে বেশি করে ইবাদত করতেন। দোয়া করতেন। কবর জিয়ারত করতেন। মায়্যিতের জন্য দোয়া করতেন। এ সমস্ত হাদীস দ্বারা এ রাতে বেশি ইবাদত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।
ইবাদতের ক্ষেত্রে মানুষ ইচ্ছা স্বাধীন। চাইলে নামায পড়তে পারে। আবার অন্য ইবাদত ও করতে পারে। যদি নামায পড়ে, তাহলে রাকাত সংখ্যা এবং পদ্ধতি তার নিজের ইচ্ছাধীন। তবে স্পষ্ট বা ইশারাগতভাবে শরীয়তে নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নামাযে যোগ করতে পারবে না। অন্যথায় সে নামায জায়েয হবেনা। (আল আছারুল মারফুআ, পৃষ্ঠা নং ৬৭)

৬. ইমামুল আসর আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. (১৩৫২ হি.) বলেন,
"هذه الليلة ليلة البراءة وصح الروايات في فضل ليلة البراءة وأما ما ذكر أرباب الكتب من الضعاف والمنكرات فلا أصل لها"
অর্থাৎ এই রাত হলো বারাআত এর রাত্রি। এছাড়া শবে বরাতের ফযীলত সংক্রান্ত সহীহ হাদীস রয়েছে।  এছাড়া কিতাবাদিতে যয়ীফ এবং মুনকার বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে, যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।( আল উরফুশ শাযী, তিরমিযীর সাথে সংযুক্ত, ১/১৫২)

৭.  মাওলানা আবদুর রহমান মুবারকপুরী রহ. (১৩৫৩ হি.) বলেন,
اعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أن لها أصلاً،
অর্থাৎ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত সম্পর্কে অনেকগুলো হাদীস বর্নিত হয়েছে। যেগুলোর সমষ্টি দ্বারা বুঝা যায় যে, এ রাতের ফযীলতের ভিত্তি রয়েছে। ( তুহফাতুল আহওয়ায়ী, ৩/১৬১)

৮. শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. (১৪২০হি.) বলেন,
حديث صحيح ، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا و هم معاذ
ابن جبل و أبو ثعلبة الخشني و عبد الله بن عمرو و أبي موسى الأشعري و أبي هريرة
و أبي بكر الصديق و عوف ابن مالك و عائشة .
و جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منهاعددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث ، فما نقلهالشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في " إصلاح المساجد " ( ص ১০৭ ) عن أهل التعديل
و التجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح ، فليس مما ينبغيالاعتماد عليه ، و لئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل
التسرع و عدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك . و الله
تعالى هو الموفق .
অর্থাৎ শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির দিকে রহমতের দিকে তাকানো সংক্রান্ত হাদীস সহীহ। সাহাবাদের একটি জামাত থেকে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। একজনের বর্ণনা অপরজনের বর্ণনাকে শক্তিশালী করে।
এরপর সবগুলো হাদীস নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর বলেন, সবগুলো সনদ হিসাবে হাদীসটি সন্দেহাতীতভাবে সহীহ। এরচেয়ে কম সংখ্যায় হাদীস বর্ণিত হলে সেটা সহীহ হয়। যতক্ষণ হাদীসটি বেশি দুর্বল না হয়। এজন্য শায়খ  কাসেমী রহ. ‘ইসলাহুল মাসাজিদ’ এ যে কথা বর্ণনা করেছেন: “ শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই” সেটা কথা গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কেউ এমনটা বলে থাকেন, সেটা বলবেন তার কম মেহনত এবং তাড়াহুড়ার কারণে। (. সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহা, হাদীস নং ১১৪৪)

আমাদের দেশে যারা বলে বেড়াচ্ছেন যে, শবে বরাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, মাওলানা আবদুর রহমান মুবারকপুরী এবং শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী তাদের মাথার তাজ। তারা দুইজন স্পষ্ট স্বীকার করেছেন যে, শবে বরাতের ফযীলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত! আশা করি তারা সঠিক বিষয়টি অনুধাবন করবেন।

এখানে বিভিন্ন মাযহাবের এবং বিভিন্ন মতাদর্শের আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরলাম। তারা সকলেই শবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে যাকে আমরা শবে বরাত বলে থাকি, এর ফযীলতের কথা স্বীকার করেছেন। সকলেই বলেছেন যে, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা সমস্ত সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। এজন্য মানুষ রাত জেগে একাকী নিভৃতে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে। তওবা করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী সে রাতে ইবাদত করেছেন, এটাও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়া যুগ যুগ ধরে সমস্ত উম্মত সে রাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এজন্য এ রাতের ফযীলত থাকা সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করার অর্থ হলো- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত অনেকগুলো সহীহ হাদীস অস্বীকার করা। যদিও শবে বরাত উপলক্ষে অনেক রুসম এবং বানোয়াট আমল আমাদের সমাজে প্রসিদ্ধ, সেগুলোকে অস্বীকার করা যেতে পারে। সেগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করা যেতে পারে! কিন্তু সাধারণভাবে শবে বরাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। কারণ এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেকগুলো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।  আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।  আমীন।

বক্তাদেরপ্রতি অনুরোধ।

অনেক মাহফিলে দেখা যায় কিছু বক্তা স্টেজে উঠে বক্তৃতা শুরু করে। অনেক কথাবার্তা (যেমন; উপস্থিত সম্মানিত  অমুক-তমুক.....) বলার পর সালাম দেন।

আমি অবাক! আলেমগণ কিভাবে এমন করেন!? উনাদের তো জানা 'আগে সালাম পরে কালাম' (কথাবার্তা)। কিন্তু আফসোস! অনেক আলেম সাধারণ মানুষের মতো, রাজনৈতিক নেতাদের মতো; এই সেই বলে সালাম দেন। এটি ভুল জনাব।
আমি আপনি (আলেম সমাজ) যদি এমন করি তাহলে তো সাধারণ মানুষ এমন করবেই। সেটাকে সঠিক ভাববেই।

তাই আসুন আমরা পরিবর্তন হই। সমাজ পরিবর্তন করি। রাসূলের সুন্নত পালন করি। তাই নিজে আমল করি ও অপরকে বলি- " আগে সালাম, পরে কালাম।

কেন তিনি জাতীয় কবি। বিদ্রোহী কবি। সাম্যের কবি।

কেন তিনি বিদ্রোহী 'কবি? কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার কবিতা যুগে যুগে কোটি তরুণকে দ...